জস বাটলারের বিধ্বংসী সেঞ্চুরী, বেঙ্গালুরুকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে ফাইনালে রাজস্থান রয়্যালস

Jos Buttler
Jos Buttler. (Photo Source: IPL/BCCI)

নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এদিন বাটলার ঝড়। তাতেই খড়কুটোর মতো উড়ে গেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আইপিএলের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচেই ফের জ্বলে উঠলেন জস বাটলার। জস বাটলারের দুর্ধর্ষ শতরানে ভর করেই আইপিএলের ফাইনালে রাজস্থান রয়্যালস। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ৭ উইকেটে হারিয়ে আইপিএলের ফাইনালে পৌঁছে গেল রাজস্থান রয়্যালস। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও ওবেদ ম্যাককয়ের বোলিংয়ে যে কাজটা শুরু হয়েছিল, ব্যাট হাতে তারই একেবারে ঠিকঠাক পরিণতি দিলেন জস বাটলার। সেইসঙ্গেই বিরাট কোহলির এক মরসুমে সর্বোচ্চ শতরানের রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেললেন তিনি।

এবারের আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের প্রধান অস্ত্রের নাম জস বাটলার। তাঁর মাথতেই রয়েছে এবারের অরেঞ্জ ক্যাপও। একা একটি দলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দক্ষতা যে তাঁর রয়েছে তা ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন তিনি। প্রথম কোয়ালিফায়ারেও একটা বড় ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ইডেন গার্ডেন্সে ভাগ্য দেবতা সেদিন সহায় ছিলেন না। তবে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এদিন আর কোনও অসুবিধা হয়নি। ব্যাট হাতে সিরাজ, শাহবাজদের বিরুদ্ধে যে ঝড় তিনি তুলেছিলেন, তা থামানোর সামর্থ এদিন বোধহয় কারোর কাছেই ছিল না। বাটলারের ব্যাটে ছিল শুধুই চার ও ছয়ের বন্যা। ৫৯ বলে সেঞ্চুরী ইনিংস খেললেন জস বাটলার।

আইপিএলের এক মরসুমে বিরাট কোহলির সর্বোচ্চ শতরানের রেকর্ড ছুঁলেন জস বাটলার

নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে বিরাট কোহলি সামনেই দাঁড়িয়েই তাঁর রেকর্ড ছুঁলেন জস বাটলার। তাঁর ৬০ বলে ১০৬ রানের ইনিংস জুড়ে রয়েছে ১০টি চার এবং ৬টি ওভার বাউন্ডারি।  আইপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসাবে এক মরসুমে চারটি সেঞ্চুরীর মালিকও হলেন এদিনই। নজির গড়ার পাশাপাশি এদিন একা হাতেই সঞ্জু স্যামসনদের আইপিএলের ফাইনালে পৌঁছে দিলেন তিনি। দুর্ধর্ষ হাকিয়ে ১১ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করে দিলেন তিনি। সেইসঙ্গে ম্যাককয় ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাদের দুর্ধর্ষ বোলিং তো রয়েছেই।

টস জিতে এদিন প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সঞ্জু স্যামসন। বিরাট কোহলিদের আটকাতে নীলনক্সাটা তাদের তৈরিই ছিল। সেই মতো  ৯ রানের মধ্যেই বিরাট কোহলিকে সাজঘরের রাস্তা দেখিয়ে দেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। রজত পাতিদারের সঙ্গে ডুপ্লেসি বড় পার্টনারশিপ গড়ার চেষ্টা চালালেও, সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওবেদ ম্যাককয়। তাঁর বলেই ২৫ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ডুপ্লেসি। বড় রান রান পাননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। তিনি ট্রেন্ট বোল্টের শিকার। ছবিটা সেই সময় থেকেই পরিষ্কার হতে শুরু করেছিল।

বাটলারের দুর্ধর্ষ ইনিংস নিয়ে সোশ্যাল সাইট জুড়ে শুভেচ্ছা বার্তার ঢল

তবুও মাঠে ছিলেন গত ম্যাচে বেঙ্গালরুর নায়ক রজত পাতিদার। তিনি একটা ভাল ইনিংস খেললেন ঠিকই, কিন্তু ৫৮ রানে রবিচন্দ্রন অশ্বিন এদিন তাঁকে সাজঘরে ফেরাতেই, বেঙ্গালরুর বড় রানের সমস্ত আশা শেষ। রজত পাতিদার এই রানটা করতে না পারলে, বেঙ্গালুরু দেড়শো রানের গন্ডী টপকাতে পারত কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আরসিবির বাকি আর কোনও ব্যাটারের রানই এদিন বলার মতো নয়। যে দীনেশ কার্তিক এবারের আইপিএলে বেঙ্গালুরুকে বারবার বাঁচিয়ে এসেছেন, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার দাপটের সামনে তাঁকেও ৬ রানেই থামতে হয়েছে।

প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও ওবেদ ম্যাককয় দুই বোলারের শ্কর এদিন তিনটি করে উইকেট। শেষপর্যন্ত ১৫৭ রান করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। কম রানের লড়াই। যদিও কোয়ালিফায়ারের মঞ্চে এই রানের ম্যাচ হাড্ডহাড্ডি হতেই পারে, এমনটাই ভেবেছিলেন সকলে। কিন্তু জস বাটলার নিজের ফরমে থাকলে. এই রান করা যে নেহাতই সহজ কাজ তা এদিন বেঙ্গালুরু ফের একবার বুঝে গেল।

ব্যাট হাতে নামা থেকেই শুরু বাটলার ঝড়। তাঁর দাপটের সামনে এদিন খড়কুটোর মতো উড়ে যান সিরাজ, শাহবাজ এবং হর্শাল পটেলদের মতো তারকা বোলাররা। জশ হেজেলউডও এদিন কিছু করে উঠতে পারেননি। বাটলারের সঙ্গে দুর্ধর্ষ ফর্মে ছিলেন যশস্বী জয়সওয়ালও। কিন্তু ১৩ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে থামতে হয় তাঁকে। সঞ্জুও কিন্তু ২৩ রানেই ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন জস বাটলার। দুর্ধর্ষ একটা সেঞ্চুরী করে রাজস্থানকে ফাইনালে পৌঁছে দিয়ে নায়কের মুকুট পড়েই মাঠ ছাড়লেন জস বাটলার।